বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার মুকুটে আরেকটি পালক মেট্রোরেল: প্রধানমন্ত্রী

উত্তরার দিয়াবাড়িতে সুধী সমাবেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: ফোকাস বাংলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মেট্রোরেলকে বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রার মুকুটে আরেকটি পালক হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আজকে আমরা বাংলাদেশের অহংকারে আরেকটি পালক সংযোজন করতে পারলাম।’

মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে আয়োজিত সুধী সমাবেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। মেট্রোরেল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক দিতে পারলাম, এটাই বড় কথা।’

সরকারপ্রধান বলেন, অনেক টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করা হয়েছে। এই মেট্রোরেল সংরক্ষণ করা সবার দায়িত্ব। যাতে মেট্রোরেলের কোনো কিছু নষ্ট না হয়, সে জন্য তিনি সবাইকে তা ব্যবহারে যত্নশীল হতে আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে মেট্রোরেল ব্যবহার করার জন্য তিনি অনুরোধ জানাচ্ছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জনগণ সেবা করার সুযোগ দিয়েছিল। সে জন্য সবার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন।

শেখ হাসিনার আগে ভাষণ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আজ অতি আনন্দের দিন, রাজধানীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের দিন। মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যে আরেকটি পালক যুক্ত হলো।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুধী সমাবেশের মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। তার আগে তিনি উদ্বোধনীস্থলে পৌঁছান। বেলা ১১টার দিকে উদ্বোধনী ফলকের প্রতিরূপ (রেপ্লিকা) জনসম্মুখে উন্মোচন করেন। তাঁর সঙ্গে আছেন ছোট বোন শেখ রেহানা। প্রতিরূপ উন্মোচনের পর মোনাজাত করা হয়।

সুধী সমাবেশের সূচি অনুযায়ী, প্রথমে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশে জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তমোহিদে, বাংলাদেশ নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।

উত্তরায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ বেলা দুইটার দিকে দিয়াবাড়ি (উত্তরা) স্টেশন থেকে মেট্রোরেল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী নিয়ে আগারগাঁওয়ের দিকে ছুটবে।

প্রথম যাত্রার যাত্রী হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিসভার সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। সাধারণ যাত্রীরা অবশ্য মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ উদ্বোধনের পর মেট্রোরেল চলাচল করবে সীমিতভাবে। আগামী ২৬ মার্চ থেকে উত্তরা-আগারগাঁও পথে পুরোদমে যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। উত্তরা আগারগাঁও পথের জন্য ৬ কোচবিশিষ্ট ১০টি ট্রেন প্রস্তুত করা হয়েছে।

প্রাথমিক পরিকল্পনা হলো প্রথম তিন মাস মেট্রোরেল মাঝের কোনো স্টেশনে থামবে না। ১০ মিনিট পর পর ট্রেন যাত্রা শুরু করবে। দিনে চলবে ৪ ঘণ্টা—সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। প্রতিটি ট্রেন সর্বোচ্চ ২০০ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। সপ্তাহে এক দিন মঙ্গলবার ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। অবশ্য টিকিট কাটা, ওঠানামা ও চলাচলে মানুষের অভ্যস্ততা তৈরি হলে ঘন ঘন ট্রেন চলবে, সব স্টেশনে থামবে এবং যাত্রীও বেশি নেওয়া হবে।

ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, অভ্যস্ততা তৈরির পর নির্ধারিত সময় কমিয়ে আনা হতে পারে। মেট্রোরেলের মূল পরিকল্পনায় প্রতি সাড়ে তিন মিনিট অন্তর ট্রেন চলার কথা। মাঝের স্টেশনে যাত্রাবিরতির সময় হবে ৩০ সেকেন্ড।

ভিড় বেশি হলে একটি ট্রেন কত যাত্রী নিতে পারবে, তার একটি হিসাবও আছে। ডিএমটিসিএল বলছে, একেকটি ট্রেনে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। বসার ব্যবস্থা রয়েছে ৩০৬ জনের। ট্রেনের সাড়ে ৯ ফুট চওড়া কোচের দুই পাশে আসন থাকবে। মাঝে প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন।