{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ কি জামায়াতের কৌশল অনুসরণ করছে?

প্রকাশঃ
অ+ অ-
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রবেশপথে জিনিসপত্র ফেলে এভাবে প্রতিবন্ধক তৈরি করা হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সব ধরনের 'কার্যক্রম নিষিদ্ধ' করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একই অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়াও চলছে। তবু এ অবস্থাতেও নিয়মিত মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছেন আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা।
 
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার আমলে যেভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সীমিত আকারে কার্যক্রম চালিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগও সেই কৌশল অনুসরণ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজপথে উপস্থিতি জানান দিতে নিয়মিত কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে নিরাপত্তার কারণে এসব আয়োজন হচ্ছে গোপনে। কোথায়, কখন কর্মসূচি হবে—তা নেতাকর্মীদের জানানো হচ্ছে শেষ মুহূর্তে। পাশাপাশি সারা দেশে নেতাকর্মীদের একটি তালিকা তৈরি করে তাঁদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ কার্যক্রমের সমন্বয় করছেন আত্মগোপনে থাকা কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। নির্দেশনা আসছে দেশের বাইরে থেকে।

রাজধানীর শ্যামলীর শিশু মেলার সামনে ও মতিঝিলে মঙ্গলবার হঠাৎ মিছিল করেন আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এর আগে শনিবার আগারগাঁও বেতার ভবনের সামনে থেকে মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত মিছিল হয়। শুক্রবার বাংলামোটর ও গুলশানে, বৃহস্পতিবার মিরপুর ও দারুস সালাম এলাকায় আকস্মিক মিছিল করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। গত এক মাসে ঢাকায় বেশ কয়েকটি বড় মিছিলও হয়েছে।

এসব কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক দায়িত্বশীল নেতা  নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বৈরী পরিস্থিতির কারণে আমাদের ঝটিকা মিছিল করতে হচ্ছে। জীবন বাজি রেখে রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছি। নিরাপদ থেকে যতটা সম্ভব কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল প্রসঙ্গে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন,  ‘সরকারের একমাত্র লক্ষ্য আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করা। আদালত প্রাঙ্গণে মব তৈরি করে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। এমন প্রতিকূল পরিবেশে আমাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে। সারা দেশে কয়েক কোটি নেতাকর্মী ও সমর্থককে এই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হচ্ছে। বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগের অবস্থার সঙ্গে অন্য কোনো দল বা সময়কে তুলনা করা যাবে না।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করিয়ে দেন,  ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে  জামায়াতে ইসলামীও সংগঠন টিকিয়ে রাখতে নানা কৌশল নিয়েছিল। তাদের অন্যতম কৌশল ছিল ঝটিকা মিছিল। কয়েক ডজন বা কয়েক শ কর্মী হঠাৎ কোনো জায়গায় জড়ো হয়ে স্লোগান দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই সরে পড়ত। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য ধরপাকড় কঠিন হয়ে যেত। পাশাপাশি দলটি ভেতরে ভেতরে একটি শক্তিশালী যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখা হতো। এমনকি তালিকাভিত্তিক সাংগঠনিক কাঠামোর ওপরও জোর দিয়েছিল তারা—কোন এলাকায় কে আছেন, কাকে কখন সক্রিয় করা যাবে—এসব হিসাব রেখে মাঠে টিকে থাকার চেষ্টা চালাত জামায়াত।

রাজনীতিসংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে আওয়ামী লীগও অনেকটা একই ধারা অনুসরণ করছে। হঠাৎ মিছিল, গোপন নির্দেশনা আর ছোট ছোট দলে সক্রিয়তা বজায় রাখাই এখন তাদের প্রধান কৌশল।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর মহাসচিব মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা ষড়যন্ত্র করছে, জনগণ সেটা মেনে নেবে না। এটা দেখার দায়িত্ব সরকারের।’

বিগত সময়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে গোপনে রাজনীতি করার অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘যারা অভিযোগ করেছেন, তারাই ব্যাখ্যা দেবেন। আমরা তা বলিনি।’ 

আওয়ামী লীগ কি পদ্ধতিগতভাবে জামায়াতের পুরোনো কৌশল অনুসরণ করছে-এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, ‘জামায়াত অতীতে টিকে থাকার রাজনীতি করেছে। এখন আওয়ামী লীগও একইভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের যে মিছিলগুলো হয়েছে, সেগুলো বেশ বড় আকারের ছিল। এগুলো গোপন বা গুপ্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি বলে মনে হয়নি।’

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ মনে করছেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান সক্রিয়তা কোনো বিদেশী শক্তির প্রভাবেও হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ মাঠে নামার চেষ্টা করছে। এর পেছনে তাদের নিজস্ব কৌশল থাকতে পারে, আবার বাইরের ইন্ধনও থাকতে পারে। তারা জামায়াতের পথ অনুসরণ করছে নাকি নিজেদের ধারা তৈরি করছে—এটা এখনই স্পষ্ট নয়। তবে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে, এটুকু নিশ্চিত।’ 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন