আলোচনার মধ্যে আন্দোলন কেন, ব্যাখ্যা দিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি
আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় সংস্কার বাস্তবায়ন প্রশ্নে কেন মাঠের কর্মসূচি দেওয়া হলো, সেটার ব্যাখ্যা দিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘আলোচনার টেবিলে যাচ্ছি কিন্তু সে আলোচনায় সফলতার মুখ দেখছি না। মনে হয় কোনো চাপের মধ্যে পড়ে সরকার একটি শুভংকরের ফাঁকির দিকে যাচ্ছে।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, এই আন্দোলন জনগণের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরার জন্য।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৫ দফা দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল জিপিও মোড় থেকে বের হলে পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও হাইকোর্টের সামনে দিয়ে মৎস্য ভবন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে জামায়াতের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে সংস্কার বাস্তবায়ন প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল তিন দিনের প্রায় অভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে। এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপিসহ কয়েকটি দল।
এই আন্দোলনকে ‘রাজনীতির অংশ’ উল্লেখ করে বিক্ষোভ সমাবেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে সেটার ভিত্তিতেই নির্বাচন হতে হবে। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো সংশোধনের জন্য এত রক্ত দেওয়া হলো। এত আলোচনা হলো। এখন যদি একটি দল বলে সংস্কার পরে হবে, তাহলে এত পরিশ্রম করানো হলো কেন?
বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোতে নির্বাচন হলে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যগুলো ঠিক করার জন্য যত সংস্কার তা যদি নির্বাচনের আগে না হয়; বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয় তাহলে এই কাঠামোতে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে।’
![]() |
জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত নেতা–কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সংখ্যানুপাতিক (পিআর) নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে গণভোটের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি, গণভোট দিন। পিআর-এর পক্ষে আছে কি বিপক্ষে আছে। জনগণ যদি পিআর মানে তো আপনাদেরও (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) মানতে হবে। আর জনগণ যদি বিপক্ষে যায় আমরা তা মেনে নেব।’ তিনি ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাজনীতি অকার্যকর করে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধীদের দৃশ্যমান বিচার করার দাবি জানান।
অন্তর্বর্তী সরকার একটি দলের পকেটে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, একটি শ্রেণি আওয়ামী লীগ স্টাইলে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী স্টাইলের কোনো নির্বাচন জনগণ আর হতে দেবে না।
সমাবেশে দলটির আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নের কোনো প্রতিশ্রুতি বা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে, তবে তার আগে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে জনগণ রাজপথ থেকে ফিরবে না।
সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আন্দোলন শুরু হয়েছে। জন আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকারকে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের বাসভবন ঘেরাও করতেও দ্বিধাবোধ করব না। তখন পালানোর জায়গা পাবেন না।’
সমাবেশে সঞ্চালক ছিলেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
যে পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াত মাঠে নেমেছে সেগুলো হলো: জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন, সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
এসব দাবিসহ আরও কিছু দাবিতে জামায়াতের পাশাপাশি গতকাল রাজধানীতে পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ করে আরও ছয়টি দল। অন্য দলগুলো হলো-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিজয়নগরে দলগুলো বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সপ্তাহের শেষ দিন রাজধানীতে এতগুলো দলের কর্মসূচি থাকায় গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে তীব্র যানজট হয়। এতে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন