এক মামলায় জামিন পেলেও আরও দুই মামলায় গ্রেপ্তার সংস্কৃতিকর্মী শামীম
![]() |
| ধর্ম অবমাননার মামলায় গ্রেপ্তার সংস্কৃতিকর্মী শামীম আশরাফ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননা ও সাইবার সুরক্ষা আইনের মামলায় সংস্কৃতিকর্মী শামীম আশরাফকে (৩৮) আদালত জামিন দিলেও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরও দুটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল হকের আদালতে কারাগারে থাকা শামীম আশরাফের জামিন শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। এরপরই কোতোয়ালি থানা-পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী আইনের দুটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে। পরে আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করেন।
ময়মনসিংহের আদালত পরিদর্শক পি এস এম মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, শামীম আশরাফকে আরও দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর নথি কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, নগরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক পরিচালিত শামীম এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ের ভেতরে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে হওয়া একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছরের ২৫ জুন নগরের নতুন বাজার এলাকার ক্যাপিটাল কলেজের অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন খান আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার মামলায় গ্রেপ্তার হন। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশের করা সেই মামলাতেও শামীম আশরাফকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার দেখানোর দুটি আবেদনেই তাঁকে ‘আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এসব ঘটনায় আসামির কাগজে-কলমে সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিভিন্ন ছবি ও কার্যক্রমের তথ্য রয়েছে। সেই তথ্যগুলো আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
শামীম আশরাফ ‘গ্রাফিটি’ নামে একটি মুদ্রণশিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। পাশাপাশি তিনি ‘পরম্পরা’ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে একজনের মন্তব্যের জবাবে তিনি ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন। পরে সেই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি ওঠে।
এ নিয়ে ৬ অক্টোবর রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শামীম আশরাফের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন খেলাফত মজলিসের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইয়াসিন আরাফত। পরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সাইবার সুরক্ষা আইনের ধারায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। ওই রাতেই নগরের আমলাপাড়া এলাকা থেকে শামীম আশরাফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে শামীম আশরাফকে গ্রেপ্তার দেখানোর ঘটনাটি সমালোচিত হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরজু আহমেদ ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘শামীম আশরাফকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জামিনে তাঁকে বাইরে আসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। উল্টো জামিনের দিনই তাঁকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শামীম আশরাফকে পছন্দ করার কারণ তাঁর বন্ধুদের আছে, অপছন্দ করার কারণও আছে! তাঁকে ঘৃণা করার সুযোগও হয়তো আছে! কিন্তু জুলাইয়ে প্রতিদিন রাজপথে থাকা শামীমকে সন্ত্রাসবিরোধী দুটি মামলায় গ্রেপ্তার করা কিছুটা হলেও বিস্ময়ের।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন