এএফপি ম্যানিলা
![]() |
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে | ছবি: সংগৃহীত |
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে গ্রেপ্তার হয়েছেন। মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানার আওতায় আজ মঙ্গলবার ম্যানিলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হংকং থেকে সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করে ম্যানিলা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরই গ্রেপ্তার হন দুতার্তে।
আইসিসির তথ্য অনুযায়ী, ৭৯ বছর বয়সী দুতার্তের বিরুদ্ধে ‘হত্যার মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। মাদকসংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িত এমন প্রমাণ ছাড়াই কয়েক হাজার দরিদ্র মানুষকে দুর্তাতের নির্দেশে ফিলিপাইনের কর্মকর্তারা হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভোরে ইন্টারপোল ম্যানিলা আইসিসির কাছ থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আনুষ্ঠানিক কাগজটি হাতে পেয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনি কর্তৃপক্ষের হেফাজতে আছেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সাবেক প্রেসিডেন্টের শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। সরকারি চিকিৎসকেরা তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।
২০১৬ সালে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন রদ্রিগো দুতার্তে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, মাদকের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই দরিদ্র মানুষ। প্রায়ই দেখা যেত, মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না পাওয়া সত্ত্বেও কর্মকর্তা ও সশস্ত্র ব্যক্তিরা তাঁদের মেরে ফেলেছেন।
২০১৯ সালে দুতার্তের নির্দেশক্রমে আইসিসি থেকে বের হয়ে আসে ফিলিপাইন। তবে ট্রাইব্যুনাল তখন বলেছিল, আইসিসি থেকে বের হয়ে আসার আগে পর্যন্ত ঘটা হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাঁদের বিচার করার এখতিয়ার আছে। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট হওয়ার বেশ কয়েক বছর আগে ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাভাওতে মেয়র হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে হওয়া হত্যার ঘটনা নিয়েও বিচারের এখতিয়ার আছে।
২০২১ সালে দুতার্তের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে আইসিসি। তবে দুই মাস পর ম্যানিলা জানায়, মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালীন পুলিশ, ভাড়াটে খুনি ও সশস্ত্রদের হাতে সংঘটিত বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছে তারা। এরপর আইসিসি তাদের তদন্ত স্থগিত করে।
আদালতের এখতিয়ারের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে ফিলিপাইনের করা আপত্তিটি পাঁচ বিচারকের প্যানেলে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ২০২৩ সালের জুলাই মাসে মামলাটি আবারও চালু হয়।
তখন থেকে প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের নেতৃত্বাধীন সরকার অসংখ্যবার বলেছে, তারা তদন্তকাজে সহযোগিতা করবে না।
তবে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের জনসংযোগ কার্যালয়ের আন্ডারসেক্রেটারি ক্লেয়ার কাস্ত্রো গত রোববার বলেছেন, ইন্টারপোল যদি সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চায়, তবে তারা তা মানতে বাধ্য।’
ফিলিপাইনে অনেকের কাছে এখনো দুতার্তের জনপ্রিয়তা আছে। অপরাধের দ্রুত সমাধানের কারণে তারা তাঁকে সমর্থন করেন। তিনি এখনো একজন ক্ষমতাবান রাজনৈতিক শক্তি। মে মাসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তার শক্ত ঘাঁটি দাভাওয়ে আবারও মেয়র হওয়ার জন্য তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মাদকবিরোধী অভিযানে প্রাণহানি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মামলায় স্থানীয়ভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের হত্যার জন্য মাত্র ৯ জন পুলিশকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
মাদকসংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজনদের গুলি করে হত্যার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বঘোষিত হত্যাকারী দুতার্তে। অভিযান চালাতে গিয়ে নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে আছে বলে বিবেচনা করলে এমনটা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। দুতার্তের দাবি, মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে পরিবারগুলো বেঁচে গেছে এবং মাদক–রাজনীতির দেশে পরিণত হওয়ার হাত থেকে ফিলিপাইনকে রক্ষা করেছে।
দুতার্তের মাদকবিরোধী যুদ্ধ নিয়ে গত অক্টোবরে ফিলিপাইনের সিনেটে তদন্ত শুরু হলে দুতার্তে বলেছিলেন, ‘আমার যা করার ছিল আমি তা–ই করেছি। আর আপনারা বিশ্বাস করুন বা না করুন, আমি এটা আমার দেশের জন্য করেছি।’